[১] ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ টার্ণ নিতে গিয়ে উলটে গেল সিএনজি। আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে দেখি আমার পাগলটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি হাসপাতালে।মাথায় ব্যান্ডেজ । ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলাম। কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত অনেকটা জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে। আমাকে তাকাতে দেখে ওর খেয়াল হল এতক্ষণে। বেরিয়ে গেল হাতে ওষূধ দিতে। এমন সময় ভাইয়া এসে ঢুকল। ভাইয়ার কাছ থেকেই সব জানলাম। ও তখন কোথায় যেন যাচ্ছিল। এক্সিডেন্ট দেখে এগিয়ে যায় সাহায্যের জন্য। আমাকে অজ্ঞান পড়ে থাকতে দেখে বের করে নিয়ে আসে এবং রিক্সা ডেকে কাছের এক ক্লিনিক এ আনে। এখানে ওর কাজিন জব করেন। সিএনজি থেকে আমাকে বের করতে গিয়েই অর হাত কেটে যায়। পরে ওর হাতেও সেলাই লাগে।আমার মোবাইল থেকে বাসায় ফোন দিয়ে ভাইয়াকে চায়, অতঃপর সব জানিয়ে একা আসতে বলে। আব্বু আম্মু আসার পর ও বাসায় চলে যায় আর ডাক্তার আমাকে এত্তগুলা টেসট করতে দেয়।
[২] পরদিন দুপুরবেলা ওর কাজিন কে নিয়ে রূমে ঢূকল। ব্যান্ডেজ বঁাধা হাত আড়ষ্টভাবে ঝুলানো আর চোখ লাল দেখে বুঝলাম হাতের ব্যথায় জ্বর এসে গেছে। চোখে পানি চলে আসছিল নিজেও বুঝি নি। টেবিল এ রাখা টেসট রিপোর্টগুলা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে হঠাৎ যেন ঝাঁকি খেয়ে অস্ফুট শব্দ করে উঠল। ফ্যাকাশে মুখে একটা রিপোর্ট বাড়িয়ে ধরল অর কাজিন এর দিকে। কাগজটার দিকে তাকিয়ে কি একটা কাজের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন উনি। পেছন পেছন ও নিজেও গেল। যেন পালাল। তবে চোখের পানি লুকোতে পারেনি গাধাটা।
[৩] আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসছি। আমি কিছুটা সুস্থ এখন। বেডে শুয়ে ছিলাম। একটু দূরে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে পাগলটা। তার খুশি বাধ মানছে না,...............একা একা হাসছে অকারণ। অথচ চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বসে যাওয়া চোখ কদিনের নীর্ঘূম রাত আর কান্নার প্রমাণ দিচ্ছে। ওর এত খুশীর কারন গতকাল ওর কাজিন জানিয়েছেন সেদিনের রিপোর্ট ভুল ছিল। শুনে বাচ্চাদের মত আনন্দে চেচামেচি করে পুরো হাসপাতালের লোক জড়ো করে ফেলেছিলো আরেকটু হলে। ঐ রিপোের্ট আমার দেহে ম্যালিগ্নেন্ট সেল পাওয়া গেছিল। তাও ব্রেন এ। ক্যামোথেরাপী কোনো কাজে আসত না। তাই দুদিন আমার কাছ থেকে পালিয়ে ছিল পাগলটা। কান্না দেখতে দিতে চায় নি। শুধু আমার কাছে এসে বসত যখন আমি ঘুমোতাম।( আসলে চোখ বুজে থাকতাম আর চোখের কোণ দিয়ে ওকে দেখতাম)। এখন আমার দিকে তাকিয়ে পাগলের মত হেসে চলেছে একমনে। আমাকে এতো ভালবাসে পাগলটা, কিন্তু ধরা দেয় না। ভয়... যদি আমি দূরে চলে যাই! বোকা কোথাকার! ও যে আমার কতটুকু...যদি জানত.........!
[৪]
আমি প্রায় পুরো সুস্থ। কিন্তু দুদিন ওর খবর নাই কেন বুঝতে পারছি না। এমন ত হওয়ার কথা না। ফোন দিচ্ছি তাও ধরছে না। অনেক্ষণ চেস্টাও পর ফোন গেল। কিন্তু একি!! ফোন ওর আপু ধরছেন। উনার কথা শুনে যেন পাথর হয়ে গেলাম। ধপ করে বসে পড়লাম বিছানায়।
[৫]
সেদিন আমার বাসা থেকে ফিরে খেতে বসে শ্বাস আটকে আসে ওর। ওখানেই জ্ঞান হারায়। ওর গলায় আগেই সমস্যা ছিল। তাই ইমার্জেন্সি অপারেশন করতে হয়।
সেই একি হাসপাতাল, একই কেবিন। শুধু আমার জায়গায় শুয়ে আছে ও। অপারেশন হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। টেবিলে একগাদা রিপোর্ট। ওর কাজিন দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে বায়োস্পি রিপোর্ট। কিছু বুঝার আগেই ছো মেরে উনার হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে পাতা উল্টালাম। শেষ পাতায় রেজাল্ট লেখা-MALIGNANCY FOUND.
একটা হাহাকার যেন বেরিয়ে গলা চিরে। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।
[৬]
চোখ খুললাম । সবাই হাসছে কেন?।, উঠে বসলাম। কোনমতে প্রশ্ন করলাম...ও-ঐ রিপোর্ট?
হোহো করে হেসে উঠল সবাই। "ওটা আমার ছিলো না" -রাগত স্বরে বলল ও। আমমার এরকম করা ওকে বিব্রত করে ফেলেছে।
-"তার মানে তোমার থ্রোট ক্যান্সার না?!" বললাম।
ঃ"না"
[৭]
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে উঠলাম।
কান্নার দমকে একটা কথাই শুধু বলতে পারলাম--"I LOVE YOU"
-"নাআ!" চিৎকার করে উঠল ও। "তুমি জানো?"
জানি। একদিন কথায় কথায় বলেছিলো-" নিজের সাথে কখনো কাউকে জড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। কারন নিজের কষ্টের বোঝার ভাগিদার অন্যকে করলে নিজেকে আমি ক্ষমা করতে পারব না"
কেঁপে উঠলাম আমি হারানোর ভয়ে। ও যদি দূরে চলে যায় আমি কার দিকে তাকিয়ে বাঁচব? দিশেহারা বোধ করলাম। আম্মুর দিকে তাকালাম সাহা্য্যের আশায় । দেখেই ও বুঝতে পারল। আগেই বলে উঠল- "" প্লিজ আন্টী, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না"। আম্মু অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এমন সময় রূমে ঢুকলেন ওর চাচ্চু আর দাদু।
[৮]
রাত ১২ঃ৩০
একটূ আগে আমাদের এঙ্গেজম্যান্ট হয়ে গেল। পাজিটা এখন পাশে বসে হাসছ।।ওর চাচ্চু রূমের বাইরে থেকে সব শুনছিলেন। রুমে ঢুকে গম্ভীর মুখে আম্মুকে ডেকে নিয়ে গেলেন।অতঃপর……
ও আপত্তি করলেও চাচ্চুর ধমক খেয়ে আর কিছু বলে নি। ওর হাত ধরতে খুব ইচ্ছে করছে। ওর বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে- তোর জন্য দুখের পাহাড় বাইতে আমার একটুও কষ্ট হবে নারে আমার পাগলটা
Sbsrabon
[২] পরদিন দুপুরবেলা ওর কাজিন কে নিয়ে রূমে ঢূকল। ব্যান্ডেজ বঁাধা হাত আড়ষ্টভাবে ঝুলানো আর চোখ লাল দেখে বুঝলাম হাতের ব্যথায় জ্বর এসে গেছে। চোখে পানি চলে আসছিল নিজেও বুঝি নি। টেবিল এ রাখা টেসট রিপোর্টগুলা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে হঠাৎ যেন ঝাঁকি খেয়ে অস্ফুট শব্দ করে উঠল। ফ্যাকাশে মুখে একটা রিপোর্ট বাড়িয়ে ধরল অর কাজিন এর দিকে। কাগজটার দিকে তাকিয়ে কি একটা কাজের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন উনি। পেছন পেছন ও নিজেও গেল। যেন পালাল। তবে চোখের পানি লুকোতে পারেনি গাধাটা।
[৩] আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসছি। আমি কিছুটা সুস্থ এখন। বেডে শুয়ে ছিলাম। একটু দূরে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে পাগলটা। তার খুশি বাধ মানছে না,...............একা একা হাসছে অকারণ। অথচ চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বসে যাওয়া চোখ কদিনের নীর্ঘূম রাত আর কান্নার প্রমাণ দিচ্ছে। ওর এত খুশীর কারন গতকাল ওর কাজিন জানিয়েছেন সেদিনের রিপোর্ট ভুল ছিল। শুনে বাচ্চাদের মত আনন্দে চেচামেচি করে পুরো হাসপাতালের লোক জড়ো করে ফেলেছিলো আরেকটু হলে। ঐ রিপোের্ট আমার দেহে ম্যালিগ্নেন্ট সেল পাওয়া গেছিল। তাও ব্রেন এ। ক্যামোথেরাপী কোনো কাজে আসত না। তাই দুদিন আমার কাছ থেকে পালিয়ে ছিল পাগলটা। কান্না দেখতে দিতে চায় নি। শুধু আমার কাছে এসে বসত যখন আমি ঘুমোতাম।( আসলে চোখ বুজে থাকতাম আর চোখের কোণ দিয়ে ওকে দেখতাম)। এখন আমার দিকে তাকিয়ে পাগলের মত হেসে চলেছে একমনে। আমাকে এতো ভালবাসে পাগলটা, কিন্তু ধরা দেয় না। ভয়... যদি আমি দূরে চলে যাই! বোকা কোথাকার! ও যে আমার কতটুকু...যদি জানত.........!
[৪]
আমি প্রায় পুরো সুস্থ। কিন্তু দুদিন ওর খবর নাই কেন বুঝতে পারছি না। এমন ত হওয়ার কথা না। ফোন দিচ্ছি তাও ধরছে না। অনেক্ষণ চেস্টাও পর ফোন গেল। কিন্তু একি!! ফোন ওর আপু ধরছেন। উনার কথা শুনে যেন পাথর হয়ে গেলাম। ধপ করে বসে পড়লাম বিছানায়।
[৫]
সেদিন আমার বাসা থেকে ফিরে খেতে বসে শ্বাস আটকে আসে ওর। ওখানেই জ্ঞান হারায়। ওর গলায় আগেই সমস্যা ছিল। তাই ইমার্জেন্সি অপারেশন করতে হয়।
সেই একি হাসপাতাল, একই কেবিন। শুধু আমার জায়গায় শুয়ে আছে ও। অপারেশন হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। টেবিলে একগাদা রিপোর্ট। ওর কাজিন দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে বায়োস্পি রিপোর্ট। কিছু বুঝার আগেই ছো মেরে উনার হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে পাতা উল্টালাম। শেষ পাতায় রেজাল্ট লেখা-MALIGNANCY FOUND.
একটা হাহাকার যেন বেরিয়ে গলা চিরে। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।
[৬]
চোখ খুললাম । সবাই হাসছে কেন?।, উঠে বসলাম। কোনমতে প্রশ্ন করলাম...ও-ঐ রিপোর্ট?
হোহো করে হেসে উঠল সবাই। "ওটা আমার ছিলো না" -রাগত স্বরে বলল ও। আমমার এরকম করা ওকে বিব্রত করে ফেলেছে।
-"তার মানে তোমার থ্রোট ক্যান্সার না?!" বললাম।
ঃ"না"
[৭]
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে উঠলাম।
কান্নার দমকে একটা কথাই শুধু বলতে পারলাম--"I LOVE YOU"
-"নাআ!" চিৎকার করে উঠল ও। "তুমি জানো?"
জানি। একদিন কথায় কথায় বলেছিলো-" নিজের সাথে কখনো কাউকে জড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। কারন নিজের কষ্টের বোঝার ভাগিদার অন্যকে করলে নিজেকে আমি ক্ষমা করতে পারব না"
কেঁপে উঠলাম আমি হারানোর ভয়ে। ও যদি দূরে চলে যায় আমি কার দিকে তাকিয়ে বাঁচব? দিশেহারা বোধ করলাম। আম্মুর দিকে তাকালাম সাহা্য্যের আশায় । দেখেই ও বুঝতে পারল। আগেই বলে উঠল- "" প্লিজ আন্টী, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না"। আম্মু অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এমন সময় রূমে ঢুকলেন ওর চাচ্চু আর দাদু।
[৮]
রাত ১২ঃ৩০
একটূ আগে আমাদের এঙ্গেজম্যান্ট হয়ে গেল। পাজিটা এখন পাশে বসে হাসছ।।ওর চাচ্চু রূমের বাইরে থেকে সব শুনছিলেন। রুমে ঢুকে গম্ভীর মুখে আম্মুকে ডেকে নিয়ে গেলেন।অতঃপর……
ও আপত্তি করলেও চাচ্চুর ধমক খেয়ে আর কিছু বলে নি। ওর হাত ধরতে খুব ইচ্ছে করছে। ওর বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে- তোর জন্য দুখের পাহাড় বাইতে আমার একটুও কষ্ট হবে নারে আমার পাগলটা
Sbsrabon
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন